মুসলিম উম্মাহর ছোট-বড় সবাই তালবিয়ার সাথে পরিচিত। হজ্বের মাস আসলে মসজিদের আলোচনা, বিভিন্ন কোর্স এবং বর্তমানে বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় তালবিয়ার অসাধারণ বাক্যমাল্য প্রতিটি মুসলিমের হৃদয়ে হজ্বের আমেজ তৈরী করে দেয়। আর মহা সৌভাগ্যশীল তারা, আল্লাহ যাদের হজ্বের সৌভাগ্য দান করেছেন তারা তো ইহরামই শুরু করেন তালবিয়ার মাধ্যমে। তালবিয়া তাদের জন্য হজ্ব সঙ্গিত।
যুগে যুগে আল্লাহর ঘরের মুসাফিরদের কণ্ঠে ও হৃদয়ে তালবিয়া ধ্বনিত হয়েছে। এই মুসাফির দলের সর্বাগ্রে আছেন মানবজাতীর সর্বোত্তম অংশ নবী-রাসূলগণ। মাঝে আছেন সাহাবা-হাওয়ারিয়্যীন এবং শুহাদা-সালেহীনের জান্নাতী দল। আর পরিশেষে আছে গুনাহগারদের দল। সবাইে এক আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি। সকলের কণ্ঠেই উচ্চারিত হয়েছে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক,।
তালবিয়ার শিক্ষাঃ
যেমনিভাবে তালবিয়ার বাক্যমাল্য সুন্দর ও অসাধারণ ঠিক তদ্রুপ তার মধ্যকার ভাব ও মর্মার্থও সুগভীর। এর সঠিক ভাব বর্ণনা করা অসম্ভব। আর আমাদের মত অনারব হলে তো কথাই নেই। তথাপিও শুধুমাত্র বাহ্যিক শব্দ থেকে যা বুঝে আসে তা নিচে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। মৌলিকভাবে আমরা তালবিয়া থেকে তিনটি শিক্ষা পাই।
(০১) আল্লাহ তাআলার সামনে পরিপূর্ণ আনুগত্য স্বীকার এবং আত্নসমর্পণ করা।
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক–আমি হাযির! ইয়া আল্লাহ! আমি হাযির!,
এই বাক্য বলে একজন হাজ্বী সাহেব অত্যন্ত মুহাব্বত ও ভ্ক্তি সহকারে আল্লাহ তাআলার সামনে একথার স্বীকৃতি দেন যে, হে আল্লাহ! আপনার দয়া ও করুনায় মস্তবড় পাপী হওয়া সত্বেও আপনার পবিত্র দরবারে উপস্থিত হয়েছি, ইচ্ছায়-অনিচ্ছায়, শয়তানের প্ররোচণায় অনেক পাপ করেছি। আজ এই অঙ্গিকার করছি যে, জীবনের সকল ক্ষেত্রে আপনার বিধান পালনে কোনরূপ শর্তছাড়াই অনুগত থাকবো, এবং সর্বাবস্থায় আপনার ফয়সালার সামনে আত্নসমর্পণ করবো।
(০২) সর্বপ্রকার শিরক ও শরীক বর্জণ করা।
‘লাব্বাইকা, লা-শারীকা লাকা, লাব্বাইক–আমি উপস্থিত! তোমার কোন শরীক নেই, আমি উপস্থিত!,
এই বাক্যের দ্বারা বাইতুল্লাহর মুসাফিরগণ স্বীকার করেন যে, হে আল্লাহ! এতদিন বিভিন্নভাবে না বুঝে নিজের টাকা-পয়সা, ক্ষেত-খামার, ব্যবসা-চাকরি, অফিসের বস, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রী ইত্যাদি তুচ্ছ ও নগণ্য বিষয়াবলীকে তোমার একচ্ছত্র রাজত্ব ও ক্ষমতার সাথে শরীক করেছি। আজকে তোমার ঘরে দাঁড়িয়ে স্বীকৃতি দিচ্ছি দুনিয়ার কেউ কিছুই করতে পারে না। একমাত্র রব ও মালিক তুমি। তুমি লা-শারীকা লাকা। তোমার কোন শরীক নেই।
(০৩) রব্বে কারীমের একত্ববাদ ও শোকর আদায় করা।
ইন্নাল হামদা ওয়ান নি‘মাতা লাকা ওয়াল মুলক লা-শারীকা লাকা–সমস্ত প্রশংসা, যাবতীয় দান-অনুগ্রহ এবং সব ধরণের রাজত্ব একমাত্র তোমার, তোমার কোন শরীক নেই,
সবশেষে হাজ্বী সাহেব এই বাক্যের দ্বারা আল্লাহ তাআলার তাওহীদ ও একত্ববাদ ঘোষণা। সাথে সাথে একথাও স্বীকার করে নেন যে, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে অসংখ্য নিয়ামতের মাঝে ডুবিয়ে রেখেছেন। এসব নিয়ামত দান একমাত্র আপনিই পারেন। তাই সমস্ত প্রশংসা হবে আপনার। এবং কৃতজ্ঞতা স্বীকার হবে একমাত্র আপনারই তরে। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের প্রতেক্যের হৃদয়ের তালবিয়ার সঠিক মর্ম ধারণ করা তাওফীক দান করুন। এবং আমাদের সকলকে আপনার ঘরের মুসাফির হিসেবে কবুল করুন।